টানা তৃতীয়বার তুর্কিয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। রোববারের নির্বাচনে ৫২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয় নিশ্চিত করেন তিনি। জয়ের প্রতিক্রিয়ায় ‘গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন এরদোয়ান। আশ্বাস দিয়েছেন, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অগ্রাধিকার দেয়ার।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের দুই দশকের শাসন দীর্ঘায়িত হওয়ার খবরে রোববার (২৮ মে) খুশিতে ফেটে পড়েন তার সমর্থকরা। চূড়ান্ত ফল নিশ্চিতের আগেই শুরু হয় উদযাপন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রানঅফের ফল পাওয়ার পর এরদোয়ানকে বিজয়ী ঘোষণা করে তুর্কিয়ের নির্বাচন পর্ষদ। এর ফলে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে কঠিন লড়াইয়ে জিতে টানা তৃতীয় দশকে শাসন পোক্ত করতে যাচ্ছেন ৬৯ বছর বয়সী এ নেতা। এ পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ ব্যালট বাক্সের ভোট গণনা হয়েছে। এতে এরদোয়ান ও তার প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান ২০ লাখের বেশি। এতে গণনা সম্পন্ন হলেও পাল্টাবে না চূড়ান্ত ফল।
ভোটের ফল পাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে এরদোয়ানের এক সমর্থক বলেন, আমরা আগেও এখানে এসেছি। আসতেই থাকবো। এটাই তো আমাদের আশ্রয়। সৃষ্টিকর্তা আমার আয়ু থেকে ২০ বছর নিয়ে প্রেসিডেন্টের আয়ু বাড়িয়ে দিক।
১৪ মে প্রথম দফার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে কোনো প্রার্থী ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করতে না পারায় নির্বাচন গড়ায় দ্বিতীয় দফায়। এ পর্যায়ে বিরোধীদের প্রায় উড়িয়ে দিয়ে পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট ঝুলিতে পুরেছেন এরদোয়ান।
তার সাম্প্রতিক শাসনামলে তুর্কিয়েতে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, ফেব্রুয়ারির প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্পে অর্ধলাখ মানুষের প্রাণহানি ও দুর্যোগপরবর্তী সময়ে সরকারের ধীর প্রতিক্রিয়ায় জনরোষ বাড়লেও ভাটা পড়েনি ক্ষমতাসীন একে পার্টিপ্রধানের জনপ্রিয়তায়। জয়ের প্রতিক্রিয়ায় অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় গুরুত্ব দিয়েছেন এরদোয়ান।
বিজয়ের পর তিনি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। এই সমস্যার সমাধান এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত আমাদের পরবর্তী প্রধান কাজ। এসব সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন কিছু নয়।
পশ্চিমা বিশ্বের দীর্ঘদিনের মিত্র তুর্কিয়ে। সাড়ে আট কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে রয়েছে উত্তর আটলান্টিক প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোর দ্বিতীয় বৃহৎ সেনাবাহিনী, টার্কিশ ভূখণ্ডে মোতায়েন রয়েছে অর্ধশত মার্কিন পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র। ৪০ লাখ শরণার্থীর আশ্রয় হয়েছে তুর্কিয়েতে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে মধ্যস্থতাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এরদোয়ান প্রশাসনের। অন্যদিকে তুর্কিয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ, এমনকি বহির্বিশ্বেও পশ্চিমাদের বিপরীতে মুসলিমদের রক্ষাকর্তা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে এরদোয়ানের।
তার এক সমর্থক বলেন, আজকের দিনটি খুশির। আমাদের প্রেসিডেন্ট জিতেছেন। মক্কায় হজে যাওয়ার আনন্দ অনুভব করছি আমি।
আরেকজন বলেন, এই বিজয় আমাদের। আল্লাহকে ধন্যবাদ, জয় ইসলামের হয়েছে।
নব্বইয়ের দশকে তুর্কিয়ের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর ইস্তাম্বুলের মেয়র হিসেবে উত্থান শুরু এরদোয়ানের। ২০০৩ থেকে ১০২৪ সাল পর্যন্ত তুর্কিয়ের প্রধানমন্ত্রী এবং ২০১৪ সাল থেকে দেশটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। তার হাত ধরে আধুনিক তুর্কিয়ের অগ্রযাত্রা হলেও গেল বছর দেশটিতে জাতীয় মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়েছে ৮০ শতাংশ; গেল পাঁচ বছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৭৭ শতাংশ দর হারিয়েছে টার্কিশ মুদ্রা লিরা।